কশা-কাটা কবজ বইটি জনপ্রিয় লেখক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল এর নতুন বই। এটি একটি সমকালীন উপন্যাস। মুহাম্মদ জাফর ইকবাল সাইন্স ফিকশন লেখক হিসেবে সমধিক পরিচিত হলেও তিনি অনেক কিশোর উপন্যাস রচনা করেছেন। তিনি শিশু-কিশোরদের একজন অত্যন্ত জনপ্রিয় লেখক।
বইয়ের নামঃ নকশা-কাটা কবজ
লেখকঃ মুহাম্মদ জাফর ইকবাল
বইমেলা ২০২৩ এ সময়কালীন উপন্যাস নকশা কাটা কবজ বইটি প্রকাশ করেছে কাকলী প্রকাশনী। ২০২২ সালে মুহাম্মদ জাফর ইকবাল আমার ডেঞ্জারাস মামী সহ আমি পরামানব, ইলেক্ট্রনিক্সের প্রথম পাঠ, আহা টুনটুনি উহু ছোটাচ্চু বই গুলো প্রকাশ করেছে।
নকশা-কাটা কবজ বইটি একটি সমকালীন উপন্যাস। উপন্যাসের শুরুতে রাজু ও মিলিয়া নামের দুইজন ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রী কে দেখা যায়। তারা একই ক্লাসে পড়লেও তাদের মধ্যে তেমন মিল নেই। কিন্তু একদিন একটা বইয়ের দোকানে তাদের দেখা হয়। এইসব কাহিনী নিয়েই নকশা কাটা কবজ বইটি লেখা হয়েছে।
Noksa Kata Koboj PDF বইয়ের কিছু অংশ
রাজু শেলফ থেকে মোটা বইটা নামাল। বইয়ের নাম ‘ক্রীতদাস ব্যবসার চারশ বছর’ লেখকের নাম ‘হার্বাট মিজো’। ছোট ছোট টাইপে ছাপানো সাড়ে চারশ পৃষ্ঠার বই। বইয়ের মাঝামাঝি আর্ট পেপারে ছাপানো বেশ কিছু ছবি। কিছু আগের দিনের সাদা-কালো ছবি, কিছু হাতে আঁকা। কয়েকটা ম্যাপ-ক্রীতদাসদের কোন পথে সমুদ্র পার করে আনতো ম্যাপে সেগুলো দেখানো আছে। রাজু বইয়ের পৃষ্ঠা ওল্টাল, হঠাৎ এক জায়গায় তার চোখ পড়ে, ‘… জাহাজের পেছনে ক্ষুধার্ত হাঙর। সমুদ্রপথে এরা জাহাজের সার্বক্ষণিক সঙ্গী।
মৃতদেহগুলো সমুদ্রে ছুড়ে ফেলা মাত্র হাঙরের মচ্ছব শুরু হয়ে যায়। … রাজু বইটার দাম দেখল, মূল্য ছয়শ টাকা। পনেরো পার্সেন্ট কমিশন দেওয়ার পরও পাঁচশ টাকা থেকে বেশি। রাজু একটা নিশ্বাস ফেলল, এত দাম দিয়ে তার একটা বই কেনার ক্ষমতা নেই। একধরনের লোভাতুর দৃষ্টি দিয়ে বইটার দিকে তাকিয়ে রাজু বইটা আবার শেলফে তুলে রাখতে যাচ্ছিল তখন হঠাৎ করে শুনল পিছন থেকে একটা মেয়ে তার নাম ধরে ডাকল,
“এই! রাজু।” রাজু ঘুরে তাকাল, তাদের ক্লাসের মিলিয়া। ইউনিভার্সিটিতে ক্লাস শুরুর কয়দিন পরেই ছেলেমেয়েরা নিজেদের মাঝে ভাগাভাগি হয়ে যায়—শহরের আর মফস্বলের ছেলেমেয়ের মাঝে ভাগটা সবচেয়ে বেশি প্রকট। রাজু মোটামুটি মফস্বলের ছেলে, শহরের ছেলেমেয়েদের থেকে খানিকটা দূরে তার জায়গা।
মিলিয়া শুধু যে শহরের মেয়ে তা না, যে ক’জন নিজে গাড়ি চালিয়ে ক্লাস করতে আসে সে তাদের একজন। তাই মিলিয়া এভাবে বইয়ের দোকানে তাকে পিছন থেকে ডাকছে দেখে সে এক একটু অবাক হলো। রাজু তার থতমত ভাব কাটিয়ে বলল, “মিলিয়া! কী খবর?”
মিলিয়া বলল, “এত মোটা বই টানাটানি করছিস?”
রাজু আবার থতমত খেল, ক্লাসের বেশিরভাগ ছেলেমেয়ে নিজেরা নিজেদের সাথে তুই তুই করে কথা বলে। রাজু যেহেতু একটু দূরে দূরে থাকে অন্তরঙ্গ হওয়ার সে রকম সুযোগ পায় না। তাই চট করে কারো সাথে তুই সম্পর্কে যেতে পারে না। রাজু তুমি-তুই জটিলতা বাঁচিয়ে বলল, “এই তো, দেখছি।”
“কী বই? দেখি।”
রাজু বইটা দেখাল এবং বইয়ের নাম দেখে মিলিয়া চোখটা একটু বড় করে মাথা নাড়ল, বলল, “ও! তুই আঁতেল!”
কথাটা খুব সহজেই টিটকারি হতে পারত কিন্তু মিলিয়া এত সহজে হাসি হাসি মুখে বলল যে রাজু হেসে ফেলল, বলল, “আঁতেল হওয়া এত সোজা না।”
মিলিয়া বলল, “আমি উপন্যাসের বাইরে জন্মেও কোনো বই পড়ি নাই! তাও শুধু রোমান্টিক উপন্যাস। আঠা আঠা প্রেম না থাকলে পড়তেই পারি না!”
রাজু একটু অবাক হয়ে মিলিয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। ক্লাসে মেয়েটাকে যেরকম মনে হয়, এই বইয়ের দোকানে মোটেও সে রকম না। শুধু তা-ই না, শাড়ি পরে আছে, চুল উড়ছে, কপালে বিচিত্র একটা টিপ। রাজু কিছু বলার আগেই মিলিয়া বলল, “বইটা রেখে দিচ্ছিস? কিনবি না?”
“নাহ!” অন্য কখনো অন্য কাউকে সে বলতে পারত না কিন্তু মিলিয়াকে কেন জানি খুব সহজে বলে ফেলল, “পয়সা নাই।”
“ধার দিবো?”
রাজু হাসল। বলল, “না, লাগবে না। থ্যাঙ্ক ইউ!”
মিলিয়া মাথা নাড়ল, কিছু বলল না! মেয়েটা মনে হয় জানে না যে তার পকেটে পাঁচশ টাকা নাই সেটা সমস্যা না, তার সমস্যা হচ্ছে এই বইয়ের পেছনে পাঁচশ টাকা খরচ করে ফেললে তার কয়েক দিন শুকনো রুটি খেয়ে থাকতে হবে।
মিলিয়ার হাতে বেশ কয়েকটা বই, চকচকে মলাট, মনে হয় বাচ্চাদের বই। রাজুকে বইগুলো দেখতে দেখে মিলিয়া অনেকটা কৈফিয়তের মতো বলল, “এগুলো কিনিছে গিফট দেবার জন্য। ”
রাজু বলল, “ও।” আলাপ চালিয়ে যাওয়ার জন্য এখন তার কিছু একটা বলা উচিত, কিন্তু যেটাই বলতে চায় সেটাতেই তুই কিংবা তুমি বলতে হবে। শেষ পর্যন্ত সাহস করে বলেই ফেলল, “তুই এখানে প্রায়ই আসিস?”
মিলিয়া মাথা নাড়ল, “হ্যাঁ।”
“আঁতেল?”
মিলিয়া হাসল, বলল, “না, এইখানে কফি খুব ভালো।” বইয়ের দোকানে কফি খুব ভালো এবং সেটা খাওয়ার জন্য একজন প্রায়ই বইয়ের দোকানে আসে সেটা রাজুর জন্য একটা নূতন তথ্য।
মিলিয়া বলল, “তুই খেয়েছিস এখানকার কফি?”
“নাহ্।”
“আয় তোকে খাওয়াব।”
কফি খাওয়ার ব্যাপারে রাজুর নিজস্ব কোনো মতামত থাকতে পারে কি না সেটা নিয়ে মিলিয়ার কোনো মাথাব্যথা আছে বলে মনে হলো না। সে তার বইগুলো বুকে চেপে ধরে হাঁটতে থাকে। রাজু তার পিছন পিছন হেঁটে যায়। বইয়ের দোকানটি বিশাল, এক পাশে ছোট একটা ক্যাফে। বেশিরভাগ বসার জায়গায় কেউ-না-কেউ বসে আছে। মিলিয়া তার মাঝে দুইজনের একটা বসার জায়গা বের করে ফেলল। বসে জিজ্ঞেস করল, “কোন কফি খাবি? লাটে নাকি আমেরিকানা?”
রাজু বলল, “কফির আরো রকম আছে নাকি? কফি তো কফিই !”
“না। কফির আরো রকম আছে। এসপ্রেসো হচ্ছে বিষের মতো তিতা, ছোট কাপে দেয়। ফ্রস্টেড দুধ দিয়ে মিশালে সেটা হচ্ছে লাটে। দুধ আরেকটু কম হলে কাপাচিনো। আর দুধ চিনি ছাড়া হচ্ছে আমেরিকানা । কোনটা খাবি?”
“বেশি করে দুধ-চিনি দিয়ে যে পায়েশের মতো একটা আছে—
মিলিয়া হাসল, বলল, “বুঝেছি। তুই এখনও কফি খাওয়া শিখিস নাই।” রাজু মাথা নাড়ল, বলল, “না শিখি নাই।” “ঠিক আছে, লাটে অর্ডার দিই। সাথে কী খাবি?”
“কিছু না।”
“এদের ডোনাট খুব ভালো। বস্টন ক্রিম?”
রাজু মাথা নাড়ল, বলল, “তুই খেতে চাইলে খা। আমার লাগবে না।”
রাজুর আসলে একটু খিদে লেগেছে। বড়সড় একটা ডোনাট পেলে খারাপ হতো না। কিন্তু চোখের কোনা দিয়ে সে দেখে ফেলেছে ডোনাট আর কফির দাম দিয়ে সে ক্রীতদাসের বইটা কিনে ফেলতে পারত!
মিলিয়া কফির অর্ডার দিলো। একটু পরেই একজন বড় বড় মগে করে তাদের কফি দিয়ে যায়। রাজু বেশ কৌতূহল নিয়ে দেখল কফির উপরে দুটি হার্ট আঁকা, ভালোবাসায় জড়াজড়ি করে আছে। কফির ওপরে যে ছবি আঁকা যায় রাজু সেটাও জানত না !
মিলিয়া কফির ওপরে জোড়া হার্টের ছবি দেখে মুখ টিপে হাসল, বলল, “এরা ভালো কফি বানায়, কিন্তু মাথায় বুদ্ধিশুদ্ধি বেশি নাই!”
“কেন?”
“ছেলে আর মেয়ে আসলেই ধরে নেয় রোমান্টিক কাপল, আর কফির ওপরে থাকে হার্টের ছবি!”
“একা আসলে কী ছবি দেয় দেখা দরকার।”
“নির্ঘাত ভাঙা হার্টের ছবি দিবে।”
রাজু একটু হেসে কফিতে চুমুক দিলো। কফি বলতে যা সে এতদিন খেয়ে এসেছে তার থেকে যথেষ্ট ভালো। সে বেশ শখ করে লাটের মগে চুমুক দিতে থাকে ।
মিলিয়া কফি খেতে খেতে কেমন যেন অন্যমনস্ক হয়ে যায়। এতক্ষণ সে-ই কথা চালিয়ে গেছে। চুপ করে থাকার পর হঠাৎ করে একধরনের নীরবতা নেমে এলো। কী বলে আবার কথাবার্তা শুরু করা যায় রাজু চিন্তা করতে থাকে কিন্তু বলার মতো সে সে রকম কিছু খুঁজে পেল না। এভাবে আরও কিছুক্ষণ কেটে যায়, কফির মগে চুমুক দেওয়ার শব্দ ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই। তখন হঠাৎ করে মিলিয়া বলল, “কাজটা ঠিক হয় নাই!”
রাজু অবাক হয়ে বলল, “কোন কাজটা?” “এই যে তোকে জোর করে ধরে নিয়ে এসেছি! তোর হয়তো আসার ইচ্ছা ছিল না, নিজের কাজ ছিল। এখন মনে মনে বিরক্ত হচ্ছিস, কথা বলার কিছু খুঁজে পাচ্ছিস না — মুখ শক্ত করে বসে আছিস – ”
রাজু কফি চুমুক দিতে গিয়ে একটা বিষম খেল। ছোট একটা কাশি দিয়ে হেসে বলল, “আমি মুখ শক্ত করে বসে নাই। আমার মুখটাই এ রকম। আর আমার কথা বলার কিছু না থাকলে তোর সমস্যা কী?” মিলিয়া মাথা নাড়ল, বলল, “না। সমস্যা নাই ৷ ”
নকশা-কাটা কবজ পিডিএফ ডাউনলোড
কাকলী প্রকাশনী কর্তৃক প্রকাশিত মুহম্মদ জাফর ইকবালের উপন্যাস নকশা-কাটা কবজের পিডিএফ এখান থেকে ডাউনলোড করা যাবে। You can now Noksa-Kata Koboj PDF Download here.