আগুনডানা মেয়ে বইটি জনপ্রিয় তরুণ লেখক সাদাত হোসাইন এর লেখা নতুন উপন্যাস। বইটি এবারের বইমেলা ২০২৪ এ প্রকাশিত হয়। সাদাত হোসাইনের আগুনডানা মেয়ে বইটি প্রকাশ করেছে অন্যপ্রকাশ। এটি একটি সমকালীন উপন্যাস।
বইয়ের নামঃ আগুনডানা মেয়ে
লেখকঃ সাদাত হোসাইন
সাদাত হোসাইন বর্তমান সময়ের একজন জনপ্রিয় লেখক। বইমেলা ২০২৪ এ সাদাত হোসাইন এর আগুনডানা মেয়ে বইটি প্রকাশিত হয়েছে। সাদাত হোসাইন নিজেকে বলেন গল্পের মানুষ। তাঁর কাছে চারপাশের জীবন ও জগত, মন ও মানুষ সকলই গল্প। তিনি মনে করেন, সিনেমা থেকে পেইন্টিং, আলোকচিত্র থেকে ভাস্কর্য, গান থেকে কবিতা- উপন্যাস-নাটক, সৃজনশীল এই প্রতিটি মাধ্যমই মূলত গল্প বলে।
গল্প বলার সেই আগ্রহ থেকেই একের পর এক লিখেছেন- আরশিনগর, অন্দরমহল, মানবজনম, নিঃসঙ্গ নক্ষত্র, নির্বাসন, ছদ্মবেশ, মেঘেদের দিন ও অর্ধবৃত্তের মতো তুমুল জনপ্রিয় উপন্যাস। ‘কাজল চোখের মেয়ে’, তোমাকে দেখার অসুখ’সহ দারুণ সব পাঠকপ্রিয় কবিতার বই। স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বোধ, দ্য শুজ, প্রযত্নের পাশাপাশি’ নির্মাণ করেছেন ‘গহীনের গান’ এর মতো ব্যতিক্রমধর্মী পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রও।
আগুনডানা মেয়ে বইয়ের কিছু অংশ
বাসর ঘরে ঢুকতেই গা গুলিয়ে উঠল পাখির। এমন বিচ্ছিরি কটু গন্ধযুক্ত ঘর সে এর আগে কখনো দেখে নি। টিমটিম করে জ্বলা হলুদ আলোর মলিন বাল্বটা টিনের চাল থেকে নেমে আসা তারের মাথায় লম্বালম্বি ঝুলছে। তার নিচেই একখানা সরু তক্তপোশ ৷ তাতে ফুলওয়ালা লাল চাদর বিছানো। কিছু গাদা ও গোলাপ ফুলের পাপড়ি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখে গেছে কেউ। কিন্তু তাতে ওই উৎকট গন্ধটা কমে নি। বরং বেড়েছে। আচ্ছা, ঘরের কোথাও কি ইঁদুর মরে পচে আছে ? কিংবা অন্য কিছু ? নাহলে এমন গা-গোলানো গন্ধ হওয়ার কথা নর। ফুলের মৃদু সুবাসের সঙ্গে পচা-গলা কোনো প্রাণীর উৎকট গন্ধ মিলে ভয়াবহ এক আবহ তৈরি করেছে।
বাইরে তুমুল বৃষ্টি। সেই বৃষ্টির জলের ছাট আসছে বেড়ার ফাঁকফোকর গলে। তাতে স্যাতসেঁতে হয়ে আছে ঘরের কীচা ম্লেখে। চৌকাঠের তলা দিয়ে একটা ছোট ব্যাঙ কি লাফিয়ে ঘরে ঢুকল? সঙ্গে বাড়ল বিভৎস ওই গন্ধটাও? পাখি কিছু ভেবে পেল না।তবে সে জানে, এই বর্ষার ব্যাঙের পিছু ‘ধাওয়া করে সাপও ঘরে চলে আসে। যদি তেমন কিছু হয ? সে সন্ত্রস্ত ভঙ্গিতে এদিক-সেদিক তাকাল। চারদিকে ময়লা, কালিঝুলি লেগে আছে। এমন ঘরে কোনো সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের পক্ষে থাকা অসম্ভব ৷ কিন্তু এই ঘরখানাই তার বাসর ঘর। আজ থেকে এখানেই তাকে বাকিটা জীবন কাটাতে হবে।
পাখি শাড়ির আঁচলে নাক চেপে ধরে বিছানার বসল । আর সঙ্গে সঙ্গেই যেন “ক্যাচ শব্দে প্রতিবাদ জানাল জীর্ণ কাঠের কাঠামোটা। বাইরে বৃষ্টির শব্দ বাড়ছে ৷ টিনের চালে এমন ঝমঝম বৃষ্টির শব্দ পাখির শরীর অবশ করে দেয়। মনও । কিন্তু আজ তেমন কিছুই হচ্ছে না। বরং সবকিছু ছাপিয়ে একটা রুক্ষ কাশির শব্দ তার কানে এসে বিধল। সে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল।ভেজানো দরজা ঠেলে যে লোকটা ঘরে প্রবেশ করল, পাখি তাকে চেনে না! লোকটা থক করে একদলা থুথু ফেলল ঘরের মেঝেতে।
তারপর পকেট থেকে সিগারেট বের করে বলল, “তুই মির্জা সাবের রাইস মিলে কাজ করস না ?”
পাখি সন্ত্রস্ত ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল।
“পাখি না তোর নাম? তা কী পক্ষী? ময়না না টিয়া?”
পাখি কথা বলল না। লোকটা সিগারেটে আগুন ধরাল । সঙ্গে সঙ্গে একটা কড়া গন্ধ এসে ধাক্কা মারল পাখির নাকে। এই গন্ধটা তার চেনা। করাতকলের অনেক শ্রমিকই বিড়ির সঙ্গে গাজা খার। এ গাজার গন্ধ। পাখি আরও শক্ত করে নিজের নাক চেপে রাখল আঁচলে ৷ লোকটা ধোয়া ছাড়তে ছাড়তে বলল, ‘বাদুর আর কাউয়াও কিন্তু পক্ষী। হা হা হা। আমারে চেনস তুই ?”
পাখি না-বোধক মাথা নাড়ল।
*’দেখস নাই কখনো ?’
পাখি কথা বলল না।
“না দেইখাই বিয়া কইরা ফালাইলি? পোলার অভাব পড়ছে নি দুনিয়ায়?’ বলে বিকট শব্দে গলাখাকারি দিয়ে আবারও মেঝেতে থুথু ফেলল সে । তারপর বলল, “আমার নাম আমজাদ৷ আমি লোক সুবিধার না। নেশাপানি, খুনখারাবির অভ্যাস আছে। মদ, গাঞ্জা খাই। এইজন্য মাথারও ঠিকঠিকানা থাকে না ।”
পাখি নিজের ভাজ করা হাঁটুর ফাকে যতটা সম্ভব মাথা গুঁজে বসে আছে। তার একবার ইচ্ছে হচ্ছিল লোকটার দিকে তাকাতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সাহস হলো না। আজ তার বাসর রাত ৷ এই রাত নিয়ে কত রোমাঞ্চকর, রসালো রঙিন গল্প যে সে আশপাশ থেকে শুনেছে তার ইরত্তা নেই। অথচ?। রাতটিতে সে বসে আছে অচেনা অজানা লোকের পাশে।
আমজাদ পাখির গা বেঁষে পীশে এটি দাড়াল। তারপর আচমকা তার বাহু খামচে ধরে বলল, “বাসর ঘর কি কাপুড় চুপুর পইরা থাকনের ঘর নাকি ? বাসর ঘর হইল নাঙ্গাপুঙ্গা থাকনের ঘর । এই ঘরে এত কাপুড় চুপুর থাকব ক্যান? এই দেখ আমি কী
করতেছি ।’ বলেই সে তার গারের জামা খুলতে লাগল । “এত বড় সেরানা হইছস, কিন্তু এখনো বাসর ঘরের কায়দাকানুন কিছু জানোস না?’
পাখি কথা বলল না। তার শরীর কাঁপছে। গা গোলাচ্ছে। এই লোক কি সত্যি সত্যিই এখন তার কাছে আসবে? তারপর তার কাপড় খুলবে? শরীর স্পর্শ করবে? তারপর…।
পাখি আর ভাবতে পারল না । সে হঠাৎ হড়বড় করে বমি করে ফেলল।
Agundana Meye PDF বইয়ের রিভিউ
গল্পটা আক্ষরিক অর্থে পাখির হলেও সামগ্রিকভাবে প্রতিটা মেয়ের জীবনের গল্পের প্রতিচ্ছবি। গল্প পড়াকালীন কোথাও কোথাও নিজেকে ভীষনভাবে উপলব্ধি করেছি। এ গল্প মুক্তির লড়াইয়ের গল্প কিন্তু কার মুক্তির? কেবলই কি পাখির নাকি গোটা দেশ গোটা জাতির মুক্তির লড়াই? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে পড়তে হবে ” আগুনডানা মেয়ে”।
প্রত্যন্ত এক গ্রাম জলডাঙ্গা। এই গ্রামের মেয়ে পাখি। অত্যন্ত দুংখী ও গরীব মা হারা এক মেয়ে। গ্রামের চেয়্যারম্যান ময়েজ মির্জার রাইস মিলে সারাদিন হাড়ভাঙ্গা খাটুনির পরে সন্ধানাগাদ পাখি পড়তে যায় পরিতোষ মাস্টারের কাছে। প্রতিদিন পড়তে যেতে পারে না, স্কুলেও নিয়মিত না। সংগ্রামী জীবনের হাড়ভাঙ্গা খাটুনির পর পড়াশুনাটা কেবলই নামমাত্র। তবে পাখি শিখতে আগ্রহী। পরিতোষ মাস্টারও পাখির মনের মধ্যে মানুষ বানানোর বীজমন্ত্র বপন করে দেন। পাখি পরিতোষ মাস্টারের কঠিন কঠিন কথা বোঝে না, সময় যতো গড়ায় ততোই যেনো কঠিন কথাগুলো পাখির কাছে সহজ হয়।
কিশোরী বয়সের উত্তাল ঢেউয়ে আড়ষ্টতা ভেঙ্গে সেও তলিয়ে যায় । দোলা দেয় বসন্তের বাতাস। বুকের বা পাশের জায়গাটা দখল করে নেয় ঢাকাতে পড়ুয়া তা নিজ গ্রামের ছেলে বশির। নানান জটিলতায় পাখির বিয়ে হয়ে যায় ময়েজ মির্জার রাইস মিলের এক মাতাল কর্মচারী আমজাদের সাথে। বিয়ের রাতেই নির্মম,নৃশংস শারীরিক অত্যাচারের স্বীকার হয়, নিজেকে বাঁচাতে ঝড় বৃষ্টির অন্ধকার রাতে দিশেহারা হয়ে ছুটতে লাগে পাখি।কেনো পাখিকে বাসর রাতে এরকম অমানবিক অত্যাচার সহ্য করতে হয়? এরপর জীবনের গল্পে কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় পাখি?
এই গল্পের এইটুকুন যতোখানি সহজ আপনার ভাবনায় আদতে কিন্তু ঠিক তার উল্টোটা। এই গল্প জটিল, এই গল্প কঠিন থেকে কঠিনতর। আমার মনে হয় আমাদের ভাবনা যেখানে শেষ হয়, লেখকের ভাবনা ঠিক সেখান থেকেই শুরু হয়। তাই এই রুদ্ধশ্বাস, লোমহর্ষক লেখা আমরা পাই। আমি যতোটুকু বললাম এর থেকে অনেক বেশি বিস্তৃত ও বড় আঙ্গিকে এই উপন্যাসের গল্পের আখ্যানভাগ।
আগুনডানা মেয়ে পিডিএফ ডাউনলোড
সাদাত হোসাইন এর লেখা অন্যপ্রকাশ প্রকাশিত আগুনডানা মেয়ে বইটি এখান থেকে ডাউনলোড করা যাবে। You can now Agundana Meye Book PDF Download here.