কৌটিলীয় অর্থশাস্ত্র বইটি প্রাচীন ভারতের রাজনীতি ও অর্থনীতি বিষয়ে লেখা একটি বই। এটি প্রাচীন ভারতবর্ষের মৌর্যবংশীয় সম্রাট চন্দ্রগুপ্তের কৌটিলীয় নামের একজন ব্রাহ্মণমন্ত্রীর লেখা বই।

বইয়ের নামঃ কৌটিলীয় অর্থশাস্ত্র
লেখকঃ কৌটিলীয়
কৌটিলীয় অর্থশাস্ত্র বইটি একটি অনেক প্রাচীন বই। এই বইটি প্রাচীন ভারতের রাজনীতি ও অর্থনীতি নিয়ে লেখা। Kautilya’s Arthashastra বইটির বাংলা অনুবাদ করেছেন ডঃ রাধাগোবিন্দ বসাক। বইটি একটি অনেক প্রাচীন বই।
কৌটিল্য একীভূত ভারতবর্ষের মৌর্যবংশীয় সন্ত্রাট চন্দ্রগুপ্তের ব্রাহ্মণমন্ত্রী। তার প্রকৃত নাম বিষ্ণুগপ্ত। তিনি চণকমুনির পুত্র বা তৎ্বংশীয় ছিলেন বিধায় তার অপর নাম চাণক্য। তার জন্মস্থান নিয়ে মতভেদ থাকলেও অধিকাংশ সূত্রমতে তার জন্ম হয়েছিল খ্রীস্টপূর্ব ৩৭০ অঝ্দে, পাটলিপুত্র নগরীতে, যা ছিল তৎকালীন মগধ রাজ্যের রাজধানী।
তার পিতা ছিলেন মগধের মহারাজার বিশিষ্ট অমাত্য। কিন্তু তার প্রতিপক্ষের প্ররোচনায় সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগে থাকে রাজদরবারে লাঞ্ছিত করেন। পিতার এই লাঞ্ছনার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য অল্প বয়সেই বিষ্ণুগুপ্ত প্রতিজ্ঞা করেন নন্দবংশের ধ্বংসসাধনই হবে তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। পিতার মৃত্যুর পর তিনি বিদ্যাশিক্ষার উদ্দেশ্যে তক্ষশিলায় গমন করেন। কারণ তৎকালীন ভারতবর্ষে এটিই ছিল বিদ্যাশিক্ষালাভের প্রধান কেন্দ্র। সেখানে অল্প বয়সেই স্বীয় প্রতিভাবলে তিনি সর্বশাস্ত্রে অসাধারণ বুৎপত্তিলাভ করেন এবং তক্ষশিলাতেই অধ্যাপনার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। মগথধের তৎকালীন নন্দবংশীয় মহারাজা মহানন্দের পুত্র চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য ছিলেন বিষ্ণুগুপ্তেরই প্রিয় ছাত্র। মায়ের মৃত্যুর পর বিষ্ণুগুপ্ত অধ্যাপনার কাজ ছেড়ে দিয়ে চলে যান পাটলিপুত্রে। চন্দ্রগুপ্তও শিক্ষাসমাপনান্তে ফিরে যান রাজধানীতে৷
বিষ্ণুপুরাণ মতে, চন্দ্রগুপ্ত ছিলেন মহারাজা মহানন্দের উপপত্লী শূদ্রবংশীয় দাসী মুরা’ গর্ভজাত সন্তান এবং সেইহেতু তিনি মগধের ‘রাজসিম্হাসনের বৈধ উত্তরাধিকারী ছিলেন না। কিন্তু চন্দ্রগুপ্ত সুশিক্ষিত ও বিশিষ্ট বুদ্ধিশক্তির অধিকারী হওয়ায় পিতার অত্যন্ত আস্থাভাজন ছিলেন। এই কারণে তার অন্যান্য বৈমাত্রেয় ভাইদের সন্দেহ ছিল পিতা হয়তোবা চন্দ্রগুপ্তকেই রাজসিংহাসনের উত্তরাধিকারী মনোনীত করে যেতে পারেন। এই সন্দেহের বশবর্তী হয়ে তারা তার প্রাণনাশের ষড়যন্ত্র করতে থাকে৷ তাই প্রাণ রক্ষার্থে তিনি পিতার রাজ্যের বাইরে ভারতবর্ষের পশ্চিমপ্রান্তে পলায়ন করেন, এবং ভারত আক্রমণকারী আলেকজান্ডারের শিবিরে আশ্রয়গ্রহণ করেন। কিন্তু আলেকজান্ডারের ভারতদখলের দুরভিসন্ধি বুঝতে পেরে তিনি সেখান থেকে পলায়ন করেন এবং আপন গুরু আচার্য বিষ্ণুপ্তপ্তের শরণাপন্ন হন, এবং তাঁর সহায়তায় ধীরে ধীরে বিশাল এক সেনাবাহিনী গড়ে তুলে নন্দবংশের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেন।
আচার্যের বুদ্ধিকৌশল এবং চন্দ্রগুপ্তের রণদক্ষতায় শেষ পর্যন্ত নন্দবংশ ধ্বংস হয় এবং চন্দ্রগুপ্ত মগধের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন খ্রীষ্টপূর্ব ৩২২ অন্দে। চন্দ্রগুপ্তের স্বীয় গুরু আচার্য বিষ্ণুগপ্তকে তিনি সাম্রাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেন।
আচার্য বিষ্ণুগু্ত অতিশয় কূটনীতিবিশারদ ছিলেন এবং তাই তিনি সম্ভবত কৌটিল্য নামেই খ্যাতিমান হন। তার রচিত “অর্থশান্ত্র” শীর্ষক গ্রন্থটে কৌটিলীয় অর্থশান্ত্র নামেই বিশ্বব্যাপী সমধিক পরিচিত ৷ ইউরোপীয় ঘরানার অর্থশান্ত্র গড়ে উঠার বহুপূর্বে রচিত এ গ্রন্থে ভারতবর্ষের তৎকালীন যাবতীয় রাজনীতিক, রাষ্ট্রবেজ্ঞানিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিবরণ তিনি এ গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেন। কৌটিল্যের পূর্ববর্তী ও সমকালীন আচার্যগণের প্রণীত যেসব অর্থশাস্ত্র তখন প্রচলিত ছিল সেগুলি অবলম্বন করে এ খ্রস্থখানি রচিত হলেও এর প্রতিটি পর্যায়ে কৌটিল্যের স্বীয় সৃষ্টিশীলতার ছাপ সুস্পষ্ট।
Kautilya’s Arthashastra বইয়ের অবতরণিকা অংশ
১৯০৯ খ্রীষ্টাব্দে মহীশূরের পত্তিত ডক্টর আর. শ্যাম শাল্ত্রী কৌটিলীয় অর্থশাস্ত্রের সর্বপ্রথম একটি সংস্করণ প্রকাশ করেন। তৎপূর্বেবে পৃথিবীর সর্ব্বত্র পত্তিতমণ্ডলী এই শাস্ত্রের নামমাত্রই অবগত ছিলেন; এবং কেবল প্রাচীন কোন কোন সংস্কৃত গ্রন্থে ইহার উল্লেখের ও সংস্কৃত টীকা পঞ্জীতে এই শাস্ত্র হইতে উদ্ধৃত বচনবিশেষের কথা তাহাদের পরিজ্ঞাত ছিল। দাক্ষিণাত্যের এই মনীষীর এই গ্রন্থের আবিষ্কার ভারতীয় সংস্কৃত সাহিত্যের নহে, জগতের সর্ব্বসাহিত্যের ইতিহাসের এক অসাধারণ ঘটনা৷ পার্থিব বা অ-পারমার্থিক বিষয়ে লিখিত এই প্রাচীন অর্থশাস্ত্রের মূল্যবত্তা অত্যন্ত অধিক। এই বিপুলায়তন গ্রন্থমধ্যে অত্যন্ত দুরূহ ও দুর্ব্বোধ অনেক বাক্য ও শব্দনিচয় রহিয়াছে।
একজন ভারতীয় শাস্ত্রবিৎ বিদেশীয় পণ্তিত এই অর্থশান্ত্রকে একখানি ‘গ্রন্থ’ না বলিয়া করিয়াছেন। পণ্তিতমণ্ডলী কর্তৃক এই গ্রন্থখানিতে সমুদ্দিষ্ট বহুবিধ বিষয়ের সম্যক পর্যালোচনা, সতর্ক বিচার ও উপযুক্ত মূল্যনির্ণয় সমাপ্ত হইতে আরও বহু বহু বৎসরের পরিশ্রমের প্রয়োজন হইবে- এইরূপ.বলিলে অত্যুক্তি করা হইবে না। এই শাস্ত্রের যে চারিখানি প্রসিদ্ধ সংস্করণে ব্যাখ্যা ও অনুবাদ্বসহ পাঠ এযাবৎ প্রকাশিত হইয়াছে, সেই পাঠ সর্ব্ব-শুদ্ধ বলিয়া গৃহীত হইতে পারে না। অনেক স্থলে পাঠ-বিষয়ে সন্দেহ রহিয়া যায়। ভবিষ্যতে ভারতের দিগৃবিদিকে অবস্থিত বিভিন্ন প্রদেশের কোন কোন স্থানে এই গ্রন্থের আরও হস্তাক্ষর-লিখিত পাগুলিপি আবিষ্কৃত হইতে পারিলে, তৎসাহায্যে পরে ইহার পাঠগশুদ্ধি ঘটিতে পারে। বাস্তবিকই এই বিশাল অর্থশাস্ত্রের সাভিনিবেশ পঠন-পাঠন একটি দুরূহ কাজ এবং ইহার শুদ্ধ ব্যাখ্যাকর্মমও স্থানে স্থানে কষ্টসাধ্য ব্যাপার।
বিগত চল্লিশ বৎসরের মধ্যে প্রাচ্য ও প্রতীচ্য দেশে অনেক মনীষাসম্পন্ন ছাত্র, অধ্যাপক ও প্রাজ্ঞ পাঠক এই অর্থশাস্ত্রে বর্ণিত ও পর্যালোচিত বিষয়বিশেষ অবলম্বন করিয়া গবেষণা চালাইয়া পত্তিতসমাজের পত্রিকাদিতে প্রবন্ধাকারে, কিংবা স্বরচিত পুস্তকপুস্তিকাতে তাহাদের গবেষণার ফল প্রকাশ করিয়াছেন এস্থলে আমরা সেগুলির বিস্তৃত উল্লেখের প্রয়োজন বোধ করি না।
এই প্রাচীন অর্থশাস্ত্রে প্রাপ্ত ভাব ও বিষয়সমূহ পাঠ ও বিবেচনা করিয়া আমাদের মনে ইহার ভিত্তিস্বরূপ যে রূপ চিত্র প্রতিফলিত হইয়াছে তাহারই কিঞ্চিৎ আভাস নিম্নে লিপিবদ্ধ হইতেছে।
আরো দেখুনঃ গাজার সেই মেয়েটি বই PDF
কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র টিকা পিডিএফ ডাউনলোড
কৌটিল্য কর্তৃক রচিত এবং ডঃ রাধাগোবিন্দ বসাক কর্তৃক অনুবাদকৃত কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র বাংলা বইটির পিডিএফ এখান থেকে ডাউনলোড করা যাবে। You can now Kautilya’s Arthashastra Bangla PDF Download here.